লোককথা কাকে বলে ?
লোককথা কাকে বলে অতীত সময়কে তুলে ধরার ক্ষেত্রে লোককথার ভূমিকা বিশ্লেষণ করো ।
লোককথা হল এক ধরনের কাল্পনিক গল্পকথা এবং এক ধরনের ঐতিহ্যবাহী লৌকিক সাহিত্য যার সাহায্যে প্রাকৃতিক বা আধ্যাত্মিক কোনো ঘটনার ব্যাখ্যা বা উপলব্ধির চেষ্টা করা হয়।
লোককথা কাকে বলে ?
এই কাহিনিগুলি কোনো অতীত বা ঐতিহাসিক ঘটনার অনুকরণে সৃষ্টি হতে পারে। লোককথার কাহিনিগুলির উদ্ভবকাল সম্পর্কে সঠিকভাবে কিছুই জানা যায় না।
তবে গবেষকগণ অনুমান করেন যে, বিভিন্ন দেশের লোককথার কাহিনিগুলির উৎপত্তি হয়েছে সভ্যতা বিকাশের আদি লগ্নে এবং বিভিন্ন সমাজ বা সংস্কৃতির মৌখিক ঐতিহ্য থেকে।
অতীতকাল থেকে মানুষের মুখে মুখে বংশপরম্পরায় চলে আসছে। ভারতে প্রায় হাজার বছর আগে রচিত নারায়ণ পণ্ডিতের ‘হিতোপদেশ’, খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় শতকে বিষ্ণুশর্মা রচিত ‘পঞ্চতন্ত্র’ এবং খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতকে রচিত জাতক কাহিনি লোককথার অন্যতম নিদর্শন।
উনিশ শতকে ইউরোপের বিভিন্ন লোককথার কাহিনিগুলি সংগ্রহ করে গবেষকগণ লিখিত বইয়ের আকারে প্রকাশ করতে শুরু করেন।
ডেনমার্কের হান্স ক্রিশ্চিয়ান অ্যান্ডারসন, জার্মানির জ্যাকব ও উইলহেম গ্রিম ভাতৃদ্বয় প্রমুখ লোককথার অন্যতম জনপ্রিয় গল্পকার ছিলেন।
লোককথার সংজ্ঞা: বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে লোককথার সংজ্ঞা দেওয়া যায়, যেমন—
(1) জীবন ও কল্পনার সংমিশ্রণ : কার্ল টমলিনসন ও ক্যারল লিব্রাউন-এর মতে, ‘মানুষের জীবন ও কল্পনার সংমিশ্রণে যেসব গল্পগাথা গড়ে উঠেছে’ তা-ই হল লোককথা।
এসব গল্পগাথা যুগের পর যুগ ধরে বংশপরম্পরায় প্রচলিত হয়ে আসছে। এসব কল্প-কাহিনিগুলি সেই সমাজ বা সভ্যতার ঐতিহ্যবাহী সাহিত্য যা প্রাকৃতিক ও আধ্যাত্মিক জগতকে বোঝার ও ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করে।
(2) প্রাকৃতিক আইনের অনুপস্থিতি : লোককথা হল এক ধরনের কাল্পনিক গল্পগাথা যা শ্রোতাদের এমন এক জগতে নিয়ে যায় যেখানে প্রাকৃতিক আইন কার্যকরী হয় না। অর্থাৎ প্রাকৃতিক বা সাধারণ নিয়মকানুনগুলি লোককথার গল্পে কার্যকরী হতে দেখা যায় না।