শেরশাহের শাসন ব্যবস্থা সংক্ষেপে আলোচনা কর । শেরশাহের শাসন ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য pdf

শেরশাহের শাসন ব্যবস্থা সংক্ষেপে আলোচনা কর । শেরশাহের শাসন ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য pdf, শেরশাহের শাসন ব্যবস্থার পরিচয় দাও, and শেরশাহের রাজত্বকাল এর গুরুত্ব কী ছিল ?

উত্তর : শেরশাহের শাসন ব্যবস্থা/কৃতিত্ব।

ভূমিকা : মধ্যযুগের ভারতের ইতিহাসে শেরশাহ এক মহিমান্বিত ব্যক্তিত্বের অধিকারী পুরুষ। দুর্ধর্ষযােদ্ধা, দুরদৃষ্টি সম্পন্ন রাজনীতিবিদ, বাস্তববাদী সংগঠক, বিচক্ষণ শাসক ও ন্যায়নিষ্ঠ সম্রাট হিসেবে তিনি দুর্লভ কৃতিত্বের অধিকারী তিনি মাত্র ৫ বৎসর (১৫৪০-৪৫) রাজত্ব করেন।

শেরশাহের শাসন ব্যবস্থা সংক্ষেপে আলোচনা কর ।

কিন্তু শাসক হিসাবে তিনি যে নবধারার প্রবর্তন করে গেছেন তা পরবর্তী মােগল বাদশাহের কাছে প্রেরণা হয়ে কাজ করে।

শেরশাহের শাসন ব্যবস্থা : শেরশাহের শাসন ব্যবস্থার বিশিষ্ট দিকগুলাে নিম্নে আলােচিত হলাে :

১. শাসন ব্যবস্থা : (i) কেন্দ্রিয় শাসন ব্যবস্থা : কেন্দ্রিয় শাসনের প্রধান হলেন শেরশাহ স্বয়ং। এক্ষেত্রে তাঁকে শাসনকার্যে সাহায্য করার জন্য চারজন মন্ত্রী ছিলেন। এছাড়াও ছিলেন একজন প্রধান বিচারপতি ও একটি গুপ্তচর বিভাগ।

(ii) প্রাদেশিক শাসন ব্যবস্থা : শাসনকার্যের সুবিধার জন্য শেরশাহ তাঁর | সাম্রাজ্যকে ৪৭টি সরকারে ভাগ করেন। সিকদার-ই-সিকদারন এবং মুনসিফ-ই-মুনসিফানের হাতে প্রতিটি সরকারের শাসনভার ন্যস্ত ছিল।

(iii) পরগনা : প্রতিটি সরকার কয়েকটি পরগনায় বিভক্ত ছিল। সিকদার, আমীন, খাজাঞ্চি প্রমুখ কর্মচারীরা পরগনার শাসন পরিচালনা করতেন।

(iv) গ্রাম : প্রতিটি পরগনা কয়েকটি গ্রাম নিয়ে গঠিত হত। গ্রাম ছিল শাসন ব্যবস্থার সর্বনিম্ন স্তর। গ্রামের শাসন চালাতেন গ্রাম পায়েত।

২. রাজস্ব নীতি : শেরশাহ জমি জরিপ করে উৎপাদিকা শক্তি অনুসারে জমিকে তিন ভাগে বিভক্ত করেন। ফসলে বা নগদ অর্থে উৎপাদনের ১/৩ ভাগ রাজস্ব হিসাবে ধার্য হয়।

জমিতে কৃষকের স্বত্ত্ব-কে পাকা করার জন্য রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ‘পাট্টা’ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। আর এক কবুলিয়ৎ মারফৎ কৃষক রাষ্ট্রকে তার প্রাপ্য মিটিয়ে দেওয়ার অঙ্গীকার করে।

৩. বিচার ব্যবস্থা : শেরশাহের বিচার ব্যবস্থা ছিল কঠোর ও নিরপেক্ষ। গ্রামের ছােটখাটো অপরাধের বিচার করতেন স্থানীয় পঞ্চায়েত। কাজী ও মীর-ই-আদল যথাক্রমে দেওয়ানী ও ফৌজদারী বিচার করতেন।

৪. মুদ্রা ব্যবস্থা : তিনি খাঁটি সােনা ও রূপার মুদ্রা প্রচলন করেন। এছাড়া ‘দাম’ নামে এক ধরনের তাম্র মুদ্রাও চালু করেন।

৫. যােগাযােগ ব্যবস্থার উন্নয়ন : তিনি পুরাতন সড়কগুলির দৈর্ঘ্য-প্রস্থ বাড়িয়ে দেন এবং পাঞ্জাব থেকে সােনার গাঁ (G.T.R.) প্রভৃতি সড়ক এবং ১৭০০ সরাইখানা নির্মাণ করেন।

৬. ঘােড়ার ডাক প্রচলন : প্রশাসনিক প্রয়ােজন পূরণ করার জন্য এবং স্বল্প ব্যয়ে যােগাযােগ ও সংবাদ পরিবহনের জন্য শেরশাহ ঘােড়ার ডাক প্রচলন করেন।

৭. সৈন্যবাহিনীতে শৃঙ্খলা স্থাপন : সেনাবাহিনীতে দু-বছর অন্তর বদলি এবং ‘দাগ’ ও ‘হুলিয়া’ ব্যবস্থা দ্বারা অশ্বকে চিহ্নিত করে শেরশাহ বাহিনীতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনেন।

৮. গুপ্তচর ও পুলিশি ব্যবস্থা : সাম্রাজ্যের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য শেরশাহ গুপ্তচর ও পুলিশী ব্যবস্থাকে জোরদার করেন।

মূল্যায়ন : পরিশেষে উল্লেখ্য, মাত্র পাঁচ বছরের রাজত্বকালে শেরশাহ এক সুষ্ঠ শাসন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সক্ষম হন। সে কারণে ঐতিহাসিক V.A. Smith যথার্থই বলেছেন যে, শেরশাহ যদি অধিককাল জীবিত থাকতেন তাহলে মহামতি মােগলদের ইতিহাসের রঙ্গমঞ্চে আবির্ভূত হওয়া সম্ভব হত না।

Leave a Comment

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.