ভৌগোলিক আবিষ্কারের কারণ ও ফলাফল আলােচনা করাে ।

ভৌগোলিক আবিষ্কারের কারণ ও ফলাফল:

উত্তর: ভৌগােলিক আবিষ্কারের কারণসমূহ : ভৌগােলিক আবিষ্কারের কারণগুলি হল নিম্নরূপ-

ভৌগোলিক আবিষ্কারের কারণ ও ফলাফল ।

১. ক্রুসেডের প্রভাব : ক্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধের ফলে প্রাচ্যের সঙ্গে বাণিজ্যসূত্রে ইতালি সর্বপ্রথম সমৃদ্ধশালী হয়ে উঠে। আর ইতালির এই সমৃদ্ধি ইউরােপের অন্যান্য দেশকে প্রাচ্যের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক গড়ে তুলতে উৎসাহিত করে। আর এই উৎসাহ ভৌগােলিক আবিষ্কারকে অনিবার্য করে তােলে।

২. কনস্ট্যান্টিনােপলের পতন : ১৪৫৩ খ্রি: কনস্ট্যান্টিনােপলের পতন ঘটলে তুর্কিরা ভূমধ্যসাগরের জলপথ ও স্থলপথ বন্ধ করে দেয়। ফলে ইউরােপীয়দের কাছে প্রাচ্যে যাওয়ার পথ বন্ধ হয়ে যায়। তখন ইউরােপীয়গণ প্রাচ্যে যাওয়ার জন্য নতুন সমুদ্রপথ আবিষ্কারে সচেষ্ট হয়ে উঠে।

৩. পরিবর্তনশীল অর্থনীতি : আধুনিক যুগের সূচনায় কৃষি ও শিল্পের উৎপাদন বহুগুণ বৃদ্ধি পাওয়ায় বাজারের প্রয়ােজন হয়। ফলে নতুন নতুন দেশ আবিষ্কারের প্রচেষ্টা শুরু হয়।

৪. মার্কোপােলাের ভ্রমণ বৃত্তান্ত : মার্কোপোেলাের ভ্রমণ বৃত্তান্ত পড়ে ইউরােপীয়গণ প্রাচ্যের অপরিমিত ঐশ্বর্যের কথা জানতে পারেন এবং সামুদ্রিক অভিযানে প্রয়াসী হন।

৫. বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার : আলােচ্যপর্বে কম্পাস, অ্যাস্ট্রোলেব এবং নক্ষত্র পরিমাপক যন্ত্র আবিষ্কৃত হয়। তৈরি হয় বিভিন্ন সামুদ্রিক পথের ম্যাপ, চার্ট, নকশা ও বড়াে বড়াে পালতােলা জাহাজ। ফলে ইউরােপের বণিক ও নাবিকরা ভৌগােলিক আবিষ্কারে প্রলুব্ধ হন।

৬. খ্রিস্টান ধর্মপ্রচারকদের উৎসাহ : ভৌগােলিক আবিষ্কারের পিছনে একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হল খ্রিস্টান ধমর্যাজকগণ কর্তৃক বনিক ও নাবিকদের উৎসাহ প্রদান। এ বিষয়ে তাদের উদ্দেশ্য হল নতুন নতুন দেশে খ্রিস্টধর্মের প্রচার ও প্রসার ঘটান।

ভৌগােলিক আবিষ্কারের ফলাফল : ভৌগােলিক বা সামুদ্রিক অভিযানের ফলাফল নিম্নরূপ-

১. নতুন নতুন দেশ ও সভ্যতার আবিষ্কার : ভৌগােলিক আবিস্কারের ফলে নতুন নতুন দেশ ও সভ্যতা-সংস্কৃতির কথা জানা যায়। যেমন- মেক্সিকোর আজটেক সভ্যতা, পেরুর ইঙ্কা সভ্যতা এবং মধ্য আমেরিকার মায়া সভ্যতার সঙ্গে বিশ্ববাসী পরিচিত হয়।

২. ভৌগােলিক জ্ঞান বৃদ্ধি : ভৌগােলিক আবিষ্কারের ফলে নতুন নতুন দেশ, মহাদেশ, মহাসাগর ও সভ্যতা আবিস্কৃত হয়। ফলে মানুষের ভৌগােলিক জ্ঞানের প্রসার ঘটে।

৩. বাণিজ্যের প্রসার : ভৌগােলিক আবিষ্কারের ফলে আমেরিকা, আফ্রিকা ও এশিয়ার নব আবিষ্কৃত দেশগুলিতে ইউরােপীয় বাণিজ্যের প্রসার ঘটে।

৪. ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা ও ঔপনিবেশিক শােষণ : নতুন নতুন দেশ আবিস্কারের ফলে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে পাের্তুগাল, স্পেন, ইংলন্ড, ফ্রান্স ও হল্যান্ড ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্য স্থাপন করে এবং ঔপনিবেশিক শােষণ চালাতে থাকে।

৫. ঔপনিবেশিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা : নব আবিষ্কৃত স্থানগুলিতে উপনিবেশ স্থাপন করাকে কেন্দ্র করে ইউরােপের শক্তিশালী দেশগুলির মধ্যে ঔপনিবেশিক প্রতিদ্বন্দিতা শুরু হয়।

৬. দাস ব্যবস্থার প্রচলন : ভৌগােলিক আবিষ্কারের ফলে ইউরােপ ও আমেরিকায় দাস ব্যবসার প্রচলন ঘটে।

৭. খ্রিস্টধর্মের প্রসার : ভৌগােলিক আবিষ্কারের ফলে খ্রিস্টান ধর্মযাজকরা খ্রিস্টধর্মের প্রচার চালান। ফলে খ্রিস্টধর্মের প্রসার ঘটে।

Leave a Comment

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.