ধর্ম সংস্কার আন্দোলন ফলাফল আলোচনা কর ।
ধর্মসংস্কার আন্দোলনের ফলাফল : ইউরােপের ধর্মসংস্কার আন্দোলনের ফলাফলকে নিম্নলিখিত ভাবে আলােচনা করা হল-
ধর্ম সংস্কার আন্দোলন ফলাফল আলোচনা কর ।
১. খ্রিস্টধর্মের প্রকৃত তাৎপর্যের বহিঃপ্রকাশ: ধর্মসংস্কার আন্দোলনের ফলে জনসাধারণ খ্রিস্টধর্মের প্রকৃত তাৎপর্য বুঝতে পারে। এই সময় বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষায় বাইবেল অনুদিত হয়। ফলে ধর্ম সম্বন্ধে লােকের অজ্ঞানতা ও কুসংস্কার ধীরে ধীরে কমতে থাকে।
২. অখন্ড খ্রিস্টান জগতের বিভাজন : ধর্মসংস্কার আন্দোলনের ফলে মধ্যযুগের অখন্ড খ্রিস্টান জগৎ দুটি সম্প্রদায়ে বিভক্ত হয়ে যায়।
(i) প্রাচীনপন্থীরা ক্যাথলিক রয়ে গেলেন, আর
(ii) নবীন পন্থীরা অর্থাৎ লুথারের মতবাদ সমর্থনকারীরা ‘প্রােটেস্ট্যান্ট’ নামে পরিচিত হলেন।
উল্লেখ্য, লুথার ক্যাথলিক চার্চের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ (Protest) করেছিলেন বলে তার অনুসৃত ধর্মমতকে প্রােটেস্ট্যান্ট ধর্মমত বলা হয়।
৩. ক্যাথলিক চার্চ ও পােপের প্রাধান্য হ্রাস : প্রােটেস্ট্যান্ট ধর্মমতের সহজ-সরল অনুশাসনগুলি জনসাধারণের আন্তরিক সমর্থন পেল। জার্মানির শাসক সম্প্রদায়, নতুন ধর্মমতের প্রভাবে খ্রিস্টান মঠগুলির সম্পত্তি অধিগ্রহণ করেন এবং পােপের প্রাধান্যকে অস্বীকার করেন। ফলে ক্যাথলিক চার্চ ও পােপের প্রাধান্য হ্রাস পায়।
৪. নিরঙ্কুশ রাজতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা : ধর্মসংস্কার আন্দোলনের ফলে উত্তর ও পশ্চিম ইউরােপের বিভিন্ন রাজ্যে রাজশক্তি পােপের নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত হয়। এবং পার্লামেন্টের সাহায্যে আইন প্রণয়ন করে পােপের প্রাধান্য লােপ করে রাজশক্তিকে নিরঙ্কুশ ক্ষমতায় প্রতিষ্ঠিত করে।
৫. ধর্ম ও রাজনীতির পৃথকীকরণ : ধর্মসংস্কার আন্দোলনের ফলে রাজশক্তির জয় সূচিত হয়। রাষ্ট্র ও রাজনীতির বিষয়ে পােপ ও ধমর্যাজকদের প্রভাব খর্ব করা হয়। ধর্ম ও রাজনীতিকে পৃথক করে উভয়ের ক্ষমতাকে সুনির্দিষ্ট করা হয়।
৬. জাতীয় চেতনার প্রসার : ধর্মসংস্কার আন্দোলনের ফলে উত্তর ও পশ্চিম ইউরােপে জাতীয়তাবাদের ব্যাপক ফুরণ ঘটে। এই জাতীয় চেতনার জাগরণের ফলে একদিকে যেমন ঐক্যবদ্ধ সাম্রাজ্য গড়ে ওঠে, অপরদিকে তেমনি রাষ্ট্রীয় গিজা’ গড়ে ওঠে।
৭. ধর্মনিরপেক্ষ আদর্শের উদ্ভব : ধর্মসংস্কার আন্দোলনের ফলে ইউরােপে ধর্মনিরপেক্ষ আদর্শের উদ্ভব ঘটে। উল্লেখ্য, এর পর থেকে ধর্ম বিষয়ে সকল অন্ধত্ব ও কুসংস্কার দূরীভূত হয় এবং বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষেরা ধর্মীয় স্বাধীনতা ভােগের অধিকার লাভ করে।
৮. প্রতি-ধর্মসংস্কার আন্দোলনের সূচনা : প্রােটেস্ট্যান্ট প্রবাহ থেকে ক্যাথলিক ধর্মকে রক্ষা করার জন্য ক্যাথলিক চার্চে শুরু হয় অভ্যন্তরীণ সংস্কার যা প্রতি-ধর্মসংস্কার আন্দোলন নামে পরিচিত।
এই আন্দোলনের ফলে ক্যাথলিক চার্চের দুর্নীতি বহুলাংশে হ্রাস পায় এবং পােপ ও ধর্মযাজকদের মানসিক ও নৈতিক মান অনেকাংশে উন্নত হয়।