ভারতের সুপ্রিম কোর্টের গঠন: ভারতের কেন্দ্রীভূত ও অখণ্ড বিচারব্যবস্থার শীর্ষে রয়েছে সুপ্রিমকোর্ট। এই আদালতকে ভারতের সর্বোচ্চ আদালত বা যুক্তরাষ্ট্রীয় আদালত বলা হয়। সংবিধানের ১২৪- ১৪৭ নং ধারাগুলিতে সুপ্রিমকোর্টের গঠন বিস্তারিতভাবে আলােচিত হয়েছে।
ভারতের সুপ্রিম কোর্টের গঠন সম্পর্কে আলোচনা করো
1) বিচারপতির সংখ্যা: পার্লামেন্টের নতুন আইন (২০১১) অনুসারে সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতির সংখ্যা বাড়িয়ে ৩০ জন করা হয়েছে।
এদের মধ্যে একজন প্রধান বিচারপতি এবং অন্য ৩০ জন সহকারী বিচারপতি। বর্তমানে (জানুয়ারি, ২০১৪) সর্বমােট ৩১ জন বিচারপতি নিয়ে সুপ্রিমকোর্ট গঠিত হওয়ার কথা নতুন আইনে বলা হয়েছে।
এ ছাড়া প্রয়ােজনে সুপ্রিমকোর্টে অস্থায়ী বিচারপতি নিয়ােগের কথা সংবিধানে বলা হয়েছে (১২৮ নং ধারা)।
2) বিচারপতিদের নিয়োগ: সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতিদের নিয়ােগ করেন রাষ্ট্রপতি। বিচারপতি নিয়ােগের আগে রাষ্ট্রপতি দরকার মতাে সুপ্রিমকোর্ট ও হাইকোর্টের বিচারপতিদের সঙ্গে পরামর্শ করতে পারেন।
এই পরামর্শ গ্রহণ করা রাষ্ট্রপতির পক্ষে বাধ্যতামূলক নয়। অবশ্য প্রধান বিচারপতি ছাড়া অন্যান্য বিচারপতি নিয়ােগের আগে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে পরামর্শ করা রাষ্ট্রপতির পক্ষে বাধ্যতামূলক।
সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতি নিয়ােগের ব্যাপারে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা অনেকটা তত্ত্বগত। বাস্তবে প্রধানমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রীর দেওয়া পরামর্শ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি এই নিযুক্তির কাজ সম্পন্ন করেন।
বিচারপতিদের যোগ্যতা, কার্যকাল ও পদচ্যুতি
3) বিচারপতিদের যােগ্যতা, কার্যকাল ও পদচ্যুতি: ভারতের সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতিদের যােগ্যতার বিষয়ে বলা হয়েছে
A) বিচারপতি হিসেবে নিযুক্ত হতে হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে ভারতের নাগরিক হতে হবে,
B) তাকে অন্তত একাদিক্রমে পাঁচ বছর কোনাে হাইকোর্টের বিচারপতি হিসেবে কাজ করতে হবে অথবা ১০ বছর একাদিক্রমে কোনাে হাইকোর্টের অ্যাডভােকেট হিসেবে কাজ করতে হবে অথবা রাষ্ট্রপতির বিবেচনা অনুযায়ী তাকে একজন প্রখ্যাত আইনজ্ঞ হতে হবে।
সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতিরা ৬৫ বছর বয়স পর্যন্ত স্বপদে বহাল থাকতে পারেন। কার্যকালের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করলে বা সংসদের প্রস্তাব অনুসারে রাষ্ট্রপতি তাঁকে পদচ্যুত করলে অথবা তার মৃত্যু হলে বিচারপতির পদ শূন্য হতে পারে।
সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতিকে পদচ্যুত করতে হলে ইমপিচমেন্ট পদ্ধতি অবলম্বন করতে হয়। কোনাে বিচারপতির বিরুদ্ধে অসদাচরণ বা অসামর্থ্যের অভিযােগ সংবলিত প্রস্তাব পার্লামেন্টের উভয়কক্ষের মােট সদস্যসংখ্যার অধিকাংশ এবং উপস্থিত ও ভােটদানকারী সদস্যদের দুই-তৃতীয়াংশের ভােটে সমর্থিত হলে প্রস্তাবটি রাষ্ট্রপতির কাছে পেশ করা হয়।
সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতিদের বেতন ও ভাতা ভারতের সঞ্জিত তহবিল থেকে দেওয়া হয়।