মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে বাবরের কৃতিত্ব মূল্যায়ন কর ।

মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে বাবরের কৃতিত্ব মূল্যায়ন কর | বাবর কীভাবে মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন?

উত্তর : বাবর কর্তৃক ভারতে মুঘল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা।

ভূমিকা : ভারতবর্ষের মধ্যযুগের ইতিহাসে বাবর একজন শ্রুতকীর্তি পুরুষ। তিনি ভারতে মুঘল সাম্রাজ্যের ভিত্তি থাপন করেন।

মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে বাবরের কৃতিত্ব মূল্যায়ন কর ।

সমসাময়িক ও আধুনিক ঐতিহাসিকদের মতে “Babar was one of the most brilliant monarch of Medieval Asia.” [মধ্যযুগের এশিয়ার ইতিহাসে বাবর ছিল একজন সর্বাপেক্ষা বুদ্ধিমান সম্রাট”]

১. প্রাথমিক জীবনের সংকট : পিতা ওমরশেখ মীর্জার মৃত্যুর পর বাবর শত্রুদের চক্রান্তে পৈতৃক রাজ্য ফরগনা থেকে বিতাড়িত হন।

২. কাবুল অধিকার : প্রায় এক বৎসর ভ্রাম্যমান অবস্থায় কাটিয়ে বাবর ১৫০৪ খ্রি: কাবুল রাজ্য দখল করেন।

৩. ভারত আক্রমণ : কাবুল দখল করার পর ভারতের অপরিসীম ঐশ্বর্য ও সােনারুপার প্রাচুর্য বাবরকে ভারত আক্রমণে প্রলুব্ধ করে।

৪. দীপালপুর, ভীরা ও শিয়ালকোট দখল : ১৫১৯-২২ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে বাবর তিনবার ভারত আক্রমণ করে দীপালপুর, ভীরা ও শিয়ালকোট দখল করেন।

৫. লাহাের দখল : ১৫২৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি লাহাের দখল করেন। উল্লেখ্য, পাঞ্জাবের শাসনকর্তা দৌলত খাঁও বাবরের বশ্যতা স্বীকার করতে বাধ্য হন।

৬. পানিপথের প্রথম যুদ্ধ জয় (১৫২৬ খ্রি:) :১৫২৬ খ্রি: ইব্রাহিম লােদিকে পরাজিত ও নিহত করে বাবর ভারতে মােগল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করেন। এর পর তিনি খলিফার কাছ থেকে কালান্দর’ উপাধি লাভ করেন ও নিজেকে দিল্লির বাদশাহ’ বলে ঘােষণা করেন।

৭. খানুয়ার যুদ্ধ জয় (১৫২৭ খ্রি:) : ১৫২৭ খ্রিস্টাব্দের ১৭ই মার্চ বাবর মেবারের রানা সংগ্রাম সিংহের নেতৃত্বে পরিচালিত সম্মিলিত রাজপুত্র বাহিনীকে খানুয়ার যুদ্ধে শােচনীয়ভাবে পরাজিত করেন। ফলে মুঘল সাম্রাজ্যের ভিত্তি সুদৃঢ় হয় এবং সাম্রাজ্যের সম্প্রসারণের পথ প্রস্তুত হয়।

৮. চান্দেরী দুর্গ জয় (১৫২৮ খ্রি:) : গােয়ালিয়রের চান্দেরী দুর্গ ছিল রাজপুতানার প্রবেশদ্বার, ১৫২৮ খ্রি: বাবর মেদিনীরায়কে পরাজিত করে চান্দেরী দুর্গ জয় করেন।

৯. ঘর্ঘরা বা গােগরার যুদ্ধ (১৫২৯ খ্রি:) : ১৫২৯ খ্রি: ৬ই মে বাবর এক অনলস অভিযান চালিয়ে সুলতান সুসরৎ শাহের নেতৃত্বপূষ্ট আফগান বাহিনীকে ঘর্ঘরা ও গঙ্গা নদীর সঙ্গমস্থলে পরাভূত করেন |

বাবরের সাম্রাজ্যসীমা : পানিপথ, খানুয়া ও ঘর্ঘরা—এই তিন যুদ্ধের মাধ্যমে বাবরের সাম্রাজ্যের ইমারত গড়ে উঠে। ভারতে বাবরের সাম্রাজ্য মধ্যএশিয়ার অক্সান নদী থেকে শুরু করে রাজমহলে পর্যন্ত বিস্তৃত হয়।

কৃতিত্বের মূল্যায়ন : বাবরের কৃতিত্বের মূল্যায়ন প্রসঙ্গে ঈশ্বরী প্রসাদ লিখেছেন—“বাবর ছিল একজন ভাগ্যান্বেষী সৈনিক, মুঘল সাম্রাজ্যের স্থপতি নন।”

প্রকৃতপক্ষে বাবরকে মুঘল সাম্রাজ্যের সংগঠক বলে গণ্য করা যেতে পারে না। তবে বাবরের কৃতিত্ব হল—মধ্যএশিয়ার মুঘল শক্তিকে ভারতমুখী করে তােলা এবং ভারতে একটি মুঘল রাজ আদর্শের প্রতিষ্ঠা করা।

Leave a Comment

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.