ভারতের রাজ্যপালের ক্ষমতা ও কার্যাবলী আলোচনা করো ।

রাজ্যপালের ক্ষমতা ও কার্যাবলী

ভারতের রাজ্যগুলিতে কেন্দ্রের মতাে সংসদীয় শাসনব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়েছে। রাষ্ট্রপতির মতাে রাজ্যপাল রাজ্যের নিয়মতান্ত্রিক শাসকপ্রধান।

রাজ্যপালের ক্ষমতা ও কার্যাবলিকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করে আলােচনা করা যেতে পারে। যেমন—[1] শাসন-সংক্রান্ত ক্ষমতা, [2] আইন-সংক্রান্ত ক্ষমতা,[3] অর্থ-সংক্রান্ত ক্ষমতা, [4] বিচার-সংক্রান্ত ক্ষমতা এবং [5] স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা।1. শাসন-সংক্রান্ত ক্ষমতা: সংবিধানের ১৫৪(১) নং ধারাঅনুসারে রাজ্যের শাসন-সংক্রান্ত সমস্তক্ষমতা । তত্ত্বগতভাবে রাজ্যপালের হাতে রয়েছে।

  • রাজ্যের সমস্ত প্রশাসনিক কাজকর্ম তাঁর নামে সম্পাদিত হয়।
  • রাজ্যের শাসন-সংক্রান্ত যাবতীয় কাজকর্ম যাতে সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হয় সেজন্য প্রয়ােজনীয় নিয়মকানুন প্রণয়নকরার ক্ষমতা রাজ্যপালের রয়েছে।
  • রাজ্যপালের শাসন-সংক্রান্ত ক্ষমতার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হল তাঁর নিয়ােগ সম্পর্কিত ক্ষমতা । রাজ্যপাল এই ক্ষমতাবলে রাজ্য বিধানসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ দল বা জোটের নেতা অথবা নেত্রীকে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নিয়ােগ করে থাকেন । পরে মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শমতাে অন্য মন্ত্রীদেরও তিনি নিয়ােগ করেন। মুখ্যমন্ত্রীসহ অন্য মন্ত্রীদের পদচ্যুত করার ক্ষমতা ও তাঁর রয়েছে। এ ছাড়া রাজ্যের মহাধিবক্তা (Advocate General), রাজ্য-জনপালন কৃষ্যক। কমিশনের সদস্য প্রভৃতি উচ্চপদস্থ রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের রাজ্যপাল নিয়ােগ করে থাকেন।
  • এ রাজ্যে শাসনতান্ত্রিক অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে বলে মনে করলে রাজ্যপাল ৩৫৬ ধারা জারি করার জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করতে পারেন।
  • রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আচার্য বা চ্যান্সেলার হিসেবে রাজ্যপালের একটি স্বতন্ত্র ভূমিকা রয়েছে।

2. অইিনসংক্রান্ত ক্ষমতা: রাজ্য আইনসভার অবিচ্ছেদ্যঅঙ্গরূপে রাজ্যপাল যে সমস্ত ক্ষমতার অধিকারী সেগুলি হল—

  • রাজ্য আইনসভার অধিবেশন আহ্বান করা বা অধিবেশন স্থগিত রাখার ক্ষমতা রাজ্যপালের রয়েছে।
  • রাজ্য বিধানসভা ভেঙে দেওয়ার ক্ষমতাও তাঁর রয়েছে।
  • রাজ্য আইনসভায় গৃহীত কোনাে বিল রাজ্যপালের সম্মতি ছাড়া আইনে পরিণত হতে পারে না।
  • অর্থবিল ছাড়া অন্যান্য বিলকে তিনি রাজ্য আইনসভায় পুনর্বিবেচনার জন্য ফেরত পাঠাতে পারেন।
  • এ ছাড়া রাজ্য আইনসভা কর্তৃক অনুমােদিত কিছু বিলের ক্ষেত্রে তিনি নিজে কোনাে সিদ্ধান্ত না নিয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে বিচার বিবেচনার জন্য পাঠিয়ে দিতে পারেন।
  • রাজ্য আইনসভার অধিবেশন বন্ধ থাকাকালীন জরুরি প্রয়ােজনে রাজ্যপালের অধ্যাদেশ বা অর্ডিন্যান্স জারি করার ক্ষমতা রয়েছে।
  • রাজ্যপালের আইন-সংক্রান্ত ক্ষমতার মধ্যে অন্যান্য উল্লেখযােগ্য বিষয়গুলি হল—দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট রাজ্য আইনসভার ক্ষেত্রে উচ্চকক্ষে শিল্প, সাহিত্য, বিজ্ঞান, সমাজসেবায় খ্যাতিমান ব্যক্তিদের মনােনয়ন দেওয়া; নিম্নকক্ষ বা বিধানসভায় প্রয়ােজনে ইঙ্গ-ভারতীয় সম্প্রদায়ের একজন প্রতিনিধিকে মনােনয়ন দেওয়া; দ্বিকক্ষবিশিষ্ট রাজ্য আইনসভায় যুগ্ম অধিবেশন আহ্বান করা রাজ্য আইনসভায় বাণী প্রেরণ করা; প্রতি বছর রাজ্য আইনসভার প্রথম অধিবেশনের শুরুতে ভাষণ দেওয়া; রাজ্য-জনপালন কৃত্যক পরিষদ, অডিটর জেনারেল প্রভৃতি সংস্থার বার্ষিক রিপাের্ট বিচারবিবেচনা করা ইত্যাদি।

3. অর্থসংক্রান্ত ক্ষমতা: রাজ্যপালের অর্থ-সংক্রান্ত ক্ষমতা ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রাজ্য বিধানসভায় বাজেট বা অর্থবিল পেশ করার আগে অর্থমন্ত্রীকে রাজ্যপালের অনুমতি নিতে হয়। কোনাে আকস্মিক দুর্যোগে রাজ্যে জরুরি পরিস্থিতি মােকাবিলা করার জন্য রাজ্যপালের হাতে আকস্মিক ব্যয় তহবিলের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এই তহবিল থেকে অগ্রিম অর্থ দেওয়ার ক্ষমতা রাজ্যপালের রয়েছে।

Leave a Comment

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.