সুপ্রিমকোর্টের কার্যক্ষেত্রকে চার ভাগে ভাগ করা হয়—[i] মূল এলাকা, [2] আপিল এলাকা, [3] পরামর্শদান এলাকা, [4] নির্দেশ, আদেশ বা লেখ জারির এলাকা।
সুপ্রিম কোর্টের ক্ষমতা ও কার্যাবলী ।
1] মুল এলাকা: সংবিধানের ১৩১ নং ধারা অনুযায়ী, যেসব বিষয়ের মামলা হাইকোর্ট বা অন্য কোনাে অধস্তন আদালতে দায়ের করা যায় না সেইগুলি সুপ্রিমকোর্টের মূল এলাকার অন্তর্ভুক্ত। আইনগত অধিকারের প্রশ্নে
(1) কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে এক বা একাধিক রাজ্য সরকারের বিরােধ বাধলে অথবা
(2) কেন্দ্রীয় সরকার এবং এক বা একাধিক রাজ্য সরকারের সঙ্গে অন্যান্য কয়েকটি বা একটি রাজ্য সরকারের বিরােধ দেখা দিলে অথবা
(3) দুই ও ততােধিক রাজ্য সরকারের মধ্যে পারস্পরিক বিরােধ দেখা দিলে একমাত্র সুপ্রিমকোর্ট-ই তার নিষ্পত্তি করে। তাছাড়া রাষ্ট্রপতি/উপরাষ্ট্রপতির নির্বাচন-সংক্রান্ত যে-কোনাে বিরােধ নিষ্পত্তির ক্ষমতা সুপ্রিমকোর্টের মূল এলাকার অন্তর্ভুক্ত।
2] আপিল এলাকা: আপিল এলাকাকে চার ভাগে ভাগ করা যায়, যেমন—
1) সংবিধানের ব্যাখ্যা-সংক্রান্ত আপিল,
2) দেওয়ানি আপিল,
3) ফৌজদারি আপিল এবং
4) বিশেষ অনুমতিসূত্রে আপিল।
1. সংবিধানের ব্যাখ্যা-সংক্রান্ত আপিল: সংবিধানের ১৩২(১) নং ধারা অনুসারে দেওয়ানি, ফৌজদারি বা অন্য যে-কোনাে মামলায় হাইকোর্ট যদি এই মর্মে প্রমাণপত্র দেয় যে সংশ্লিষ্ট মামলাটির সঙ্গে সংবিধানের ব্যাখ্যা- সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন জড়িত,
তাহলে ওই মামলার বিষয়ে সুপ্রিমকোর্টে আপিল করা যায়। তা ছাড়া হাইকোর্ট এ ধরনের প্রমাণপত্র না দিলেও সুপ্রিমকোর্ট যদি মনে করে যে মামলাটির সঙ্গে সংবিধানের ব্যাখ্যাসংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন জড়িত,
তাহলে সুপ্রিমকোর্ট নিজেই মামলাটির বিচারের জন্য আপিলের ‘বিশেষ অনুমতি’ (Special ( leave) দিতে পারে [১৩৬(১) নং ধারা]।
2. দেওয়ানি আপিল: ১৯৭২ সালে সংবিধানের ৩০তম সংশােধনের পর বর্তমানে কোনাে দেওয়ানি মামলায় হাইকোর্ট যদি এই মর্মে প্রমাণপত্র দেয় যে সংশ্লিষ্ট মামলাটির সঙ্গে আইনের সাধারণ প্রকৃতির গুরুত্বপূর্ণ কোনাে প্রশ্ন জড়িত,
তাহলে সেই মামলাটির বিষয়ে সুপ্রিমকোর্টে আপিল করা যায়। তা ছাড়া সংবিধানের ১৩৩(১) নং ধারা অনুসারে হাইকোর্ট যদি মনে করে যে, কোননা দেওয়ানি মামলার বিচার সুপ্রিমকোর্টে হওয়া উচিত তবে সেই মামলা সম্বন্ধে সুপ্রিমকোর্টে আপিল করা যায়।
4. ফৌজদারি আপিল: ফৌজদারি মামলার বিষয়ে তিনটি ক্ষেত্রে হাইকোর্টের রায়, ডিক্রি বা চূড়ান্ত আদেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিমকোর্টে আপিল করা যায়—[i] নিম্নতর আদালতের রায়ে নির্দোষ বলে প্রমাণিত কোনাে ব্যক্তিকে হাইকোর্ট মৃত্যুদণ্ড দিলে, [ii] নিম্ন আদালতে বিচার চলাকালীন কোনাে মামলা নিজের হাতে তুলে নিয়ে হাইকোর্ট অভিযুক্ত ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ড দিলে, [iii] কোনাে মামলা সুপ্রিমকোর্টে আপিলযােগ্য বলে হাইকোর্ট প্রমাণপত্র দিলে।
তা ছাড়া বর্তমানে সংবিধানের ১৩৪(২) নং ধারা অনুসারে পার্লামেন্ট কর্তৃক প্রণীত ১৯৬৯ সালের একটি আইন অনুযায়ী স্বল্পমেয়াদি
অথবা দীর্ঘমেয়াদি কারাদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত যে-কোনাে নাগরিক সুপ্রিমকোর্টে আপিল করতে পারে।
4. বিশেষ অনুমতিসূত্রে আপিল: সংবিধানের ১৩৬(১) নং ধারা অনুযায়ী ভারতের সামরিক আদালত বা সামরিক ট্রাইব্যুনাল ছাড়া যে-কোনাে আদালত বা ট্রাইব্যুনালের রায়,
আদেশ বা দণ্ডের বিরুদ্ধে আপিল করার জন্য সুপ্রিমকোর্ট ‘বিশেষ অনুমতি দিতে পারে। ১৯৭৮ সালের ৪৪তম সংবিধান সংশােধনের পর থেকে হাইকোর্ট কোনাে মামলার রায় দেওয়ার সময়েই সুপ্রিমকোর্টে আপিলের অনুমতি দিতে পারে,
অথবা বিবদমান কোনাে পক্ষের মৌখিক আবেদনের ভিত্তিতে তৎক্ষণাৎ আপিলের অনুমতি দিতে পারে।
3] পরামর্শদান এলাকা: সংবিধানের ১৪৩(১) নং ধারা অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি যদি মনে করেন আইন বা তথ্য-সংক্রান্ত বিষয়ে কোনাে সর্বজনীন গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন দেখা দিয়েছে বা দিতে পারে তাহলে তিনি সে বিষয়ে সুপ্রিমকোর্টের কাছে পরামর্শ চাইতে পারেন।
এক্ষেত্রে সুপ্রিমকোর্ট পরামর্শ দিতে বাধ্য নয়। তবে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে শুনানির পর সুপ্রিমকোর্ট তার মতামত জানাতে পারে।
তা ছাড়া সংবিধান চালু হওয়ার আগে সম্পাদিত সন্ধি, চুক্তি, অঙ্গীকারপত্র, সনদ ইত্যাদির মধ্যে যেগুলি সংবিধান চালু হওয়ার পরও বলবৎ রয়েছে, সেগুলির বিষয়ে কোনাে বিরােধ দেখা দিলে রাষ্ট্রপতি সুপ্রিমকোর্টের পরামর্শ চেয়ে পাঠাতে পারেন [১৪৩(২) নং ধারা]। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতিকে পরামর্শ দিতে সুপ্রিমকোর্ট বাধ্য।
4] নির্দেশ, আদেশ বা লেখ জারির এলাকা: মৌলিক অধিকার ক্ষুন্ন হলে তা বলবৎ ও কার্যকর করার জন্য নাগরিকরা সুপ্রিমকোর্টে আবেদন করতে পারে।
সুপ্রিমকোর্ট এই উদ্দেশ্যে বন্দী-প্রত্যক্ষীকরণ, পরমাদেশ, প্রতিষেধ, অধিকারপৃচ্ছা, উৎপ্রেষণ প্রভৃতি নির্দেশ, আদেশ বা লেখ জারি করতে পারে।
*অন্যান্য ক্ষমতা: এ ছাড়াও সুপ্রিমকোর্টের আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ ক্ষমতা রয়েছে। যেমন, সংবিধানের ১২৯ নং ধারা অনুযায়ী সুপ্রিমকোর্টের অভিলেখ আদালত বা Court of Records হিসেবে কাজ করার ক্ষমতা রয়েছে।
বিভিন্ন মামলায় নিজের দেওয়া যে-কোনাে রায় বা আদেশ পুনর্বিবেচনা করার অধিকারও সুপ্রিমকোর্টের আছে।
সংবিধানের ১৪২(২) নং ধারা অনুযায়ী, আদালত-অবমাননার জন্য সুপ্রিমকোর্ট অবমাননাকারীর শাস্তিবিধানের ব্যবস্থা করতে পারে।
সংবিধানের ১৪১ নং ধারা অনুযায়ী সুপ্রিমকোর্ট কর্তৃক ঘােষিত বিধি অনুসরণ করা ভারতের সমস্ত আদালতের পক্ষে বাধ্যতামূলক।
তা ছাড়া, যে-কোনাে বিষয়ে পূর্ণ ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে প্রয়ােজনীয় ডিক্রি ও আদেশ জারি করার ক্ষমতাও সুপ্রিমকোর্টের রয়েছে।
নিজের কাজকর্ম সম্পাদনের জন্য প্রয়ােজনীয় সংখ্যক কর্মী নিয়ােগের ক্ষমতাও সুপ্রিমকোর্টকে দেওয়া হয়েছে।