ক্রেতা আদালতের ক্ষমতা ও কার্যাবলি: ক্রেতা আদালতের যেসব ক্ষমতা ও কার্যাবলি রয়েছে তা হল-
ক্রেতা আদালতের ক্ষমতা ও কার্যাবলি ব্যাখ্যা করাে ।
1) ক্রেতার স্বার্থ সুরক্ষিত করা: ক্রেতা আদালতের প্রথম ও প্রধান কাজ হল ক্রেতার স্বার্থ সুরক্ষিত করা। এর উদ্দেশ্যেই ক্রেতা আদালতের সৃষ্টি।
প্রতারিত ও প্রবঞ্চিত ক্রেতারা কীভাবে ন্যায্য প্রতিকার বা ক্ষতিপূরণ পেতে পারেন তা সুনিশ্চিত করাই এর প্রধান কাজ।
2) এক্তিয়ার পর্যালোচনা করা: অন্যান্য আদালতের মতাে ক্রেতা আদালতও কোনাে অভিযােগ বা নালিশ বিচার করার আগে সেই বিষয়ে তার এক্তিয়ার আছে কি না দেখে নেয়।
এক্তিয়ারের মধ্যে না পড়লে সেই অভিযোেগ বা নালিশের বিচার করা হয় না।
3) অন্তর্বর্তী আদেশ জারির ক্ষমতা: ২০০২ খ্রিস্টাব্দের সংশােধিত ক্রেতা সুরক্ষা আইন ক্রেতা আদালতকে মামলা চলাকালীন অন্তর্বর্তী আদেশ জারির ক্ষমতা আছে।
সংশােধিত আইনে বলা হয়েছে যে, মামলা চলাকালীন ক্রেতা আদালত প্রয়ােজনে মামলার ঘটনা ও অবস্থার বিচারবিবেচনা করে অন্তর্বর্তী আদেশ জারি করতে পারে।
4) ভারতীয় দণ্ডবিধি প্রয়োগের ক্ষমতা: ক্রেতা সুরক্ষা আইনে ক্রেতা আদালতকে কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে দেওয়ানি ও ফৌজদারি কার্যবিধি এবং ভারতীয় দণ্ডবিধি প্রয়ােগের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এই বিশেষ ক্ষেত্রগুলি হল-
- কোনাে সাক্ষী বা প্রতিপক্ষকে সমন পাঠিয়ে ক্রেতা আদালতে হাজির হতে বাধ্য করা।
- সাক্ষ্য প্রমাণের জন্য প্রয়ােজনীয় দলিল দস্তাবেজ বা দ্রব্য সংগ্রহ করে সেগুলিকে উপস্থাপিত করা।
- সাক্ষীকে হলফনামা দিয়ে সাক্ষ্য দিতে বলা ইত্যাদি।
5) নালিশ খারিজ করার ক্ষমত: দেশের অসংখ্য ক্রেতা। সাধারণের উপকার ও তাদের সুরক্ষার মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে। ক্রেতা আদালত গঠিত হয়েছে, কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে অনেক সময় ক্রেতারা এর অপব্যবহারও করে থাকেন।
এক্ষেত্রে ক্রেতার নালিশ অতিতুচ্ছ (Frivolous) বা হয়রানিমূলক (Vexatious) বলে প্রমাণিত হলে তা খারিজ করে দিয়ে তাকে জরিমানা করার ক্ষমতা ক্রেতা আদালতের রয়েছে।
যেমন, সােডা ওয়াটারের বােতলের ভিতর একটি ভাসমান বস্তু দেখা যাচ্ছিল বলে একজন ক্রেতা ক্রেতা আদালতে নালিশ করে ১২ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করে।
জাতীয় ক্রেতা আদালত বা জাতীয় কমিশন এই অভিযােগের সত্যতা যাচাই করতে গিয়ে বিস্মিত হয়ে শেষ পর্যন্ত বাদীকে ভৎর্সনা করে তার নালিশ খারিজ করে দেয় (P. A. Pouran Vs MC Dowell & Co., 1989)
6) আদেশ বলবৎ করার ক্ষমতা: ক্রেতা সুরক্ষা আইনের ২৫ নং ধারা অনুসারে ক্রেতা আদালতকে তার আদেশ বলবৎ করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।
এই আইন অনুসারে যদি জেলা ক্রেতা আদালত, রাজ্য কমিশন বা জাতীয় কমিশনের দেওয়া কোনাে অন্তর্বর্তী আদেশ না মানা হয়, তাহলে সংশ্লিষ্ট ক্রেতা আদালত আদেশ অমান্যকারীর সম্পত্তি ক্রোক করতে পারে।
এ ছাড়া ক্রেতা সুরক্ষা আইনের ২৭ নং ধারায় আরও স্পষ্ট করে বলা হয়েছে। যে, ক্রেতা আদালতের দেওয়া আদেশ মানতে ব্যর্থ হলে আদেশ অমান্যকারীর জেল ও জরিমানা দুই হতে পারে।
এই উদ্দেশ্যে জেলা, রাজ্য ও জাতীয় স্তরের ক্রেতা আদালতকে প্রথম শ্রেণির বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের যাবতীয় ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে ।