বক্সারের যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল আলোচনা করো । Pdf

বক্সারের যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল, উত্তর : ইংরেজদের সঙ্গে মীরকাশিমের বিরোধের কারণ/বক্সারের যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল।

ভূমিকা : ইংলিশ-ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানির সঙ্গে এক গোপন চুক্তির মাধ্যমে সংঘটিত প্রাসাদ বিপ্লব (১৯শে অক্টোবর, ১৭৬০) সূত্রে নবাব মীর্জাফরের জামাতা মীরকাশিম বাংলার মসনদে অধিষ্ঠিত হন।

পূর্বতন নবাবের মত কোম্পানির ক্রীড়নক হয়েচলার হীনমনোবৃত্তি তাঁর ছিল না। মসনদে বসার পর হতে মীরকাশিক কোম্পানির নিয়ন্ত্রণ মুক্ত হয়ে চলার সিদ্ধান্ত নিলে নবাব কোম্পানির বিরোধের সূচনা হয়।

বক্সারের যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল

বিরোধের কারণ : ইংরেজ কোম্পানির সঙ্গে মীরকাশিমের বিরোধের কারণগুলি হল নিম্নরূপ —

১. কোম্পানি ও আলি গৌহর সম্পর্ক এবং নবাবের ভ্রান্ত ধারণা : মসনদে আসীন হওয়ার পর মীরকাশিমের ধারণা হয় — কোম্পানি শাহজাদা আলি গৌহরকে দিল্লিতে প্রতিষ্ঠিত হতে সাহায্য দেবে এবং বিনিময়ে বাংলার দেওয়ানী আদায় করবে।

মীরকাশিমের এই ধারণা নবাব-কোম্পানি বিরোধ বেঁধে ওঠার অন্যতম কারণ।

2. কোম্পানি ও রামনারায়ণের সম্পর্ক : বিহারের শাসনকর্তা রামনারায়ণ মীরকাশিমের কথায় কোনও গুরুত্ব দেননি। আবার রামনারায়ণের পক্ষে ইংরেজ কোম্পানি থাকায় নবাব তাকে সমুচিত শাস্তিও দিতে অপারগ হন। ফলে নবাব-কোম্পানির সম্পর্কের অবনতি ঘটে।

৩. কোম্পানির কর্মচারীবর্গের ঔদ্ধত্য : ইংরেজ কর্মচারীরা নবাব মীরকাশিমের বিচার বিভাগের কাজকর্মে হস্তক্ষেপ করতে থাকে, জমিদারদের কাছ থেকে যে কোন অজুহাতে অর্থ আদায় করতে থাকে। নবাবের কর্তৃত্ব সর্বত্র অস্বীকৃত হয়। ফলে নবাব-কোম্পানি বিরোধ বেঁধে উঠে।

৪. দস্তক ও বাণিজ্য সংক্রান্ত বিরোধ : মীরকাশিমের সময়ে দস্তকের অপব্যবহার সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যায়। এমতাবস্থায় ১৭৬২ খ্রি: কোম্পানির সঙ্গে নবাবের মুঙ্গের চুক্তিক্রমে স্থির হয় যে, দেশিয় বণিকেরা ২৫% এবং কোম্পানির কর্মচারীরা ৯% হারে শুল্ক দেবে।

কিন্তু কলকাতার ইংরেজ কোম্পানির কর্তারা এই শর্ত মানতে অসম্মত হলে মীরকাশিম সমূহ পণ্যের উপর শুল্ক আদায় বন্ধ করে দেন।

মীরকাশিমের ক্ষমতা সঞ্চার : কোম্পানির প্রভাব থেকে মুক্ত থাকার উদ্দেশ্যে মীরকাশিম কয়েকটি ব্যবস্থা নেন।

যেমন— (i) বার্ষিক ২৬ লক্ষ টাকার অঙ্গীকার করে মোগল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলমের কাছ থেকে নবাবি ফরমান লাভ করেন।

(ii) মুর্শিদাবাদ থেকে মুঙ্গেরে রাজধানী স্থানান্তরিত করেন।

(iii) নব প্রতিষ্ঠিত রাজধানীকে দুর্গ দ্বারা সুরক্ষিত করেন।

(iv) সমর্, মার্কার প্রমুখ ইউরোপীয় সমর বিশেষজ্ঞদের সাহায্যে নবাবি বাহিনীকে সংগঠিত করেন।

(v) তিনি কামান ও বন্দুক তৈরির ব্যবস্থা করেন ।

বক্সারের যুদ্ধ : ক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ সংক্রান্ত নবাবি প্রচেষ্টা ও শুল্ক তুলে দেওয়া সংক্রান্ত মীরকাশিমের কার্যকলাপে কলকাতা কাউন্সিল নবাবের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে।

কাটোয়া, গিরিয়া ও উদয়নালার যুদ্ধে পরাজিত হয়ে মীরকাশিম অযোধ্যায় আশ্রয় নেন। অযোধ্যার নবাব সুজাউদ্দৌলা ও দিল্লির বাদশাহ দ্বিতীয় শাহ আলমের সম্মিলিত শক্তির সাহায্য নিয়ে তিনি ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হন।

১৭৬৪ খ্রিস্টাব্দের ২২শে অক্টোবর বক্সারের যুদ্ধে এই সম্মিলিত বাহিনী ইংরেজদের কাছে পরাজিত হয়।

বক্সারের যুদ্ধের ফলাফল/গুরুত্ব : ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য বিস্তারের ইতিহাসে বক্সারের যুদ্ধ ছিল একটি যুগান্তকারী ঘটনা। কেননা,

(i) বক্সারের যুদ্ধে বাংলার নবাব, অযোধ্যার নবাব ও মোগল সম্রাট একযোগে পরাজিত হন।

(ii) বক্সারের যুদ্ধের ফলে নবাব কোম্পানির হাতের পুতুলে পরিণত হয় এবং বাংলার বুকে কোম্পানির যথেচ্ছ লুণ্ঠন শুরু হয়।

(iii) অযোধ্যার নবাব সুজাউদ্দৌলা কোম্পানির নিয়ন্ত্রণাধীন হয়ে পড়ে।

(iv) বক্সার যুদ্ধে জয়লাভ সূত্রে কোম্পানি বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার দেওয়ানী লাভ করতে সক্ষম হয়।

উপসংহার : পরিশেষে উল্লেখ্য, বক্সারের যুদ্ধের পর ইংরেজ কোম্পানি বাংলার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মঞ্চের প্রকৃত পরিচালক হয়ে ওঠে। টিন 18 পতনের ইতিহাস বিবত করো।

Leave a Comment

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.