পলাশীর যুদ্ধের কারণ গুলি কি কি ? পলাশীর যুদ্ধের ২টি কারণ ।

পলাশীর যুদ্ধের কারণ গুলি কি কি ? উত্তর : পলাশির যুদ্ধের কারণ/সিরাজ-উদ-দৌলার সঙ্গে ইংরেজদের বিরােধের কারণ।

ভূমিকা : ১৭৫৬ সালের এপ্রিল মাসে আলিবর্দি খাঁ-র অপুত্রক অবস্থায় মৃত্যু হলে তার কনিষ্ঠা কন্যা আমিনা বেগমের পুত্র মীর্জা মহম্মদ সিরাজ-উদ্-দ্দৌলা বাংলার মসনদে বসেন।

তরুণ নবাব ও ইংলিশ-ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানির মধ্যে অল্পকালের মধ্যে অসন্তোষ ও বিরােধ শুরু হয়। আর এই বিরােধের পরিণতি হিসেবে পলাশির যুদ্ধ সংঘটিত ।

পলাশীর যুদ্ধের কারণ গুলি কি কি ?

বিরােধের কারণ : সিরাজ ও ইংলিশ-ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানির মধ্যে বিরােধের তথা পলাশির যুদ্ধের পিছনে যে সমস্ত কারণ ছিল তা নিম্নরূপ- •

১. সৌজন্যহীন ব্যবহার : সিরাজ মসনদে বসার পর চিরাচরিত প্রথা অনুযায়ী ফরাসি ও ওলন্দাজ বণিকেরা নজরানা পাঠিয়ে নবাবকে সম্মান জানায়।

কিন্তু ইংরেজ কোম্পানি নতুন নবাবকে আনুগত্য জানাতে ও নজরানা পাঠাতে বিলম্ব করে। ফলে সিরাজ অপমানিত বােধ করেন এবং ইংরেজদের প্রতি ক্ষুব্ধ হন।

২. সিরাজবিরােধী গােষ্ঠীর সঙ্গে কোম্পানির যােগাযােগ : সিরাজের নবাব হওয়ার বিরােধী ছিলেন—আলিবর্দীর জ্যেষ্ঠা কন্যা ঘসেটি বেগম এবং মধ্যমা কন্যার পুত্র পুর্ণিয়ার দেওয়ান সৌকৎজঙ্গ।

সিরাজের ধারণা হয় যে, ইংরেজ কোম্পানি সিরাজবিরােধী গােষ্ঠীর সঙ্গে যােগাযােগ রেখেছে এবং সৌকজঙ্গের সঙ্গে এক গােপন বােঝাপড়ায় আবদ্ধ হয়েছে। ফলে ইংরেজদের প্রতি সিরাজের মনােভাব রুষ্ট হয়।

৩. কৃদাসকে আশ্রয় দান : সিরাজ সিংহাসনে বসার পর তার মাসি ঘসেটি বেগমকে মুর্শিদাবাদের নবাব অন্তঃপুরে নজরবন্দী করেন ও তার ধনসম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেন।

ঘসেটি বেগমের পরামর্শদাতা রাজবল্লভকে মুর্শিদাবাদে এসে সরকারি হিসাবপত্র বুঝিয়ে দিতে আদেশ দেন। নবাবের শাস্তির ভয়ে রাজবল্লভ ভীত হয়ে পুত্র কৃয়দাসকে পরিবারের লােকজন ও প্রচুর ধনরত্ন সহ কলকাতার ইংরেজ কুঠির অধ্যক্ষ ডেকের কাছে পাঠিয়ে দেয়।

সিরাজ কৃয়দাসকে প্রত্যার্পণের জন্য ড্রেকের নিকট নারায়ণ দাসকে পাঠান। কিন্তু ডেক নারায়ণ দাসকে অপমানিত করে তাড়িয়ে দেয়। ফলে সিরাজ ইংরেজদের উচিত শিক্ষা দিতে মনস্থির করেন।

৪. দস্তক’-এর অপব্যবহার : ফারুখশিয়ারের দেওয়া (১৭১৭ খ্রি:) ফরমান অনুসারে কোম্পানি দস্তক’ অর্থাৎ বাংলায় বিনাশুল্কে বাণিজ্য করার অধিকার পেয়েছিল।

কিন্তু কোম্পানির কর্মচারীরা নিজেদের ব্যক্তিগত ব্যবসায়ের জন্য ‘দস্তক’ ব্যবহার করতে থাকলে এমনকি দেশিয় বণিকদের দস্তক বিক্রয় করতে থাকলে সিরাজ ক্ষুব্ধ হন।

৫. কলকাতায় বে-আইনীভাবে দুর্গ নির্মাণ : নবাবের অনুমতি না নিয়ে ইংরেজ কোম্পানি কলকাতায় ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গের পুননির্মাণ আরম্ভ করে। সিরাজ দুর্গ নির্মাণ বন্ধের জন্য কোম্পানিকে বারংবার কড়া নির্দেশ দেন।

কিন্তু কোম্পানি এ বিষয়ে কর্ণপাত করেননি। এমনকি নবাবের দূত নারায়ণ দাসকে অপমান ও লাঞ্ছনা করে তাড়িয়ে দেন। ফলে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ অনিবার্য হয়ে উঠে।

সিরাজের কলকাতা অধিকার : এমতাবস্থায় ইংরেজদের শাস্তি প্রদানের উদ্দেশ্যে নবাব তাঁদের কাশিমবাজার | কুঠি অধিকার করেন (৪ঠা জুন, ১৭৫৬)।

আর ২০শে জুন ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গ সহ কলকাতা দখল করেন, এবং আলিবর্দির ২ নাম অনুসারে কলকাতার নাম রাখেন ‘আলিনগর।

আলিনগরের সন্ধি (১৭৫৭-এর ৯ই ফেব্রুয়ারি) : কলকাতার পতনের সংবাদ মাদ্রাজে পৌছালে মাদ্রাজ থেকে কর্ণেল ক্রাইভ ও ওয়াটসন এসে কলকাতা পুনরুদ্ধার করেন। নবাব ইংরেজদের সঙ্গে আলিনগরের সন্ধি স্বাক্ষর করেন।

মীর্জাফরের সঙ্গে ক্লাইভের গােপন চুক্তি : ১৭৫৭-এর ৫ই জুন ক্লাইভ ও মীর্জাফরের মধ্যে এক গােপন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

চুক্তিতে স্থির হয়- (i) যুদ্ধের সময় মীর্জাফর নবাবী সেনাকে নিশ্চেষ্ট রাখবেন, (ii) মীর্জাফর বাংলার নবাব হবেন। ।

পলাশীর যুদ্ধ : আলিনগরের সন্ধি ভাঙার অজুহাতে ক্লাইভ সিরাজের বিরুদ্ধে সৈন্য প্রেরণ করেন। ক্লাইভকে বাধাদানের জন্য নবাব সৈন্য নিয়ে পলাশীতে উপস্থিত হন।

ফলে ১৭৫৭-এর ২৩শে জুন উভয়ের মধ্যে যুদ্ধ হয়। নবাবের প্রধান সেনাপতি বিশ্বাসঘাতক মীর্জাফরের প্রভাবে নবাবের অধিকাংশ সেনা নিশ্চেষ্ট থাকে।

ফলে সিরাজের পরাজয় ঘটে। হতভাগ্য নবাব পলায়ন করতে গিয়ে ধরা পড়েন এবং মীর্জাফরের পুত্র মীরণের আদেশে ঘাতক মহম্মদী বেগ সিরাজকে নৃশংসভাবে হত্যা করে।

পলাশীর যুদ্ধের ২টি কারণ

Leave a Comment

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.