দীন-ই-ইলাহি বলতে কী বােঝায় ?: আকবর বিভিন্ন ধর্মের সারবস্তুর সমন্বয়ে ১৫৮২ খ্রিস্টাব্দে (মতান্তরে ১৫৮১ খ্রি.) দীনই ইলাহি’ নামে একেশ্বরবাদী আদর্শের প্রবর্তন করেন।
দীন-ই-ইলাহি বলতে কী বােঝায় ?
আবুল ফজল ও বাউনি একে ‘তৌহিদ- ই ইলাহি’ বলে অভিহিত করেছেন যার অর্থ হল ‘স্বর্গীয় একেশ্বরবাদ’। এই ধর্মে কোনাে বিশেষ ঈশ্বরের কথা না বলে সকল ধর্মের মূল নীতিগুলির সমন্বয় ঘটানাে হয়েছে। তাই ইতিহাসবিদ ভন নােয়ার ‘দীন-ই-ইলাহি’-কে একেশ্বরবাদের পরিবর্তে সর্বেশ্বরবাদী বলার পক্ষপাতী।
2. দীন-ই-ইলাহির আদর্শ: “দীন-ই-ইলাহি ধর্মমতে পুরােহিত, মন্দির, নবি বা কোনো ধর্মগ্রন্থের স্থান নেই। অতীন্দ্রিয় বিশ্বাস ও নৈতিক জীবন দর্শনের ভিত্তিতে কল্পিত এই ধর্মমতে আকবর আত্মার সঙ্গে পরমাত্মার মিলনের জন্য এক আধ্যাত্মিক পথের সন্ধান করেছেন।
হিন্দুধর্মের জন্মান্তরবাদ, উপনিষদের একেশ্বরবাদ, বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মের অহিংস নীতি, পারসিক ধর্মের সূর্য ও অগ্নি উপাসনা, ইসলামের নামাজ, রমজান প্রভৃতি বিভিন্ন আদর্শের সমন্বয়ে আকবরের এই ধর্মমত গড়ে ওঠে।
দাউনির মতে, সম্রাট দীন-ই-ইলাহির অনুগামীদের কাছ থেকে চার প্রকার আনুগত্য দাবি করতেন। এগুলি হল- সম্রাটের কাছে তাদের জীবন, সম্পত্তি, সম্মান ও ধর্ম সমর্পণ করার প্রতিশ্রুতি দান।
সম্রাটের প্রতি এই চার প্রকার আনুগত্যের বিষয়টি দীনইইলাহির গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল। এছাড়া দীনই ইলাহির অনুগামীদের আরও কয়েকটি আদর্শ মেনে চলতে হত।
সেগুলি হল— 1) উদারতা, সহৃদয়তা, নম্র ও ভদ্র স্বভাব; 2) অন্ধবিশ্বাস, কুসংস্কার ও সাম্প্রদায়িকতা ত্যাগ; 3) নিরামিষ ভােজন; 4) দানধর্ম পালন; 5) বাল্যবিবাহ, জুয়া খেলা, মদ্যপান ইত্যাদির অবসান।