বিচার বিভাগীয় সক্রিয়তা কাকে বলে?: গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থায় বিচার বিভাগের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান রয়েছে। সংবিধানের ব্যাখ্যাকর্তা ও অভিভাবক। হিসেবে বিচার বিভাগের প্রাধান্য ইতিমধ্যেই গণতান্ত্রিক দেশগুলিতে স্বীকৃত হয়েছে।
দেশের সাংবিধানিক বিধিব্যবস্থা এবং আইনকানুনের মৌলিক কাঠামাে সংরক্ষণের দায়ভার বিচার বিভাগের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু রাজনৈতিক নেতাদের দ্বারা পরিচালিত আইন ও শাসন বিভাগ যখন তার নির্দিষ্ট সীমা লঙ্ঘন করে ক্ষমতার অপব্যবহার ঘটায়, তখন বিচার বিভাগীয় সক্রিয়তার উদ্ভব ঘটে।
বিচার বিভাগীয় সক্রিয়তা কাকে বলে?
সাধারণভাবে বিচার বিভাগীয় সক্রিয়তা বা ‘Judicial Activism’ বলতে বিচার বিভাগের সক্রিয় পদক্ষেপ গ্রহণ কাকে বােঝায়।
বিচার বিভাগীয় সক্রিয়তার ফলে শীর্ষ আদালত প্রচলিত এক্তিয়ারের বাইরে জনস্বার্থের সঙ্গে জড়িত যাবতীয় বিষয়ে ঐতিহাসিক রায়দানের পরিপ্রেক্ষিতে তার ভূমিকাকে সম্প্রসারিত করেছে।
সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. জে. সি. জোহারির মতে, ১৯৮০ সালের পর থেকে ভারতে বিচার বিভাগীয় সক্রিয়তার উদ্ভব ঘটে।
রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে দুর্নীতিমুক্ত করা, মহামারী দূরীকরণে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণে নির্দেশ দেওয়া, পরিবেশদূষণ রােধে প্রয়ােজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া ইত্যাদি বিষয়ে সুপ্রিমকোর্ট সরকারের প্রতি এই সময় থেকে নির্দেশ জারি করতে শুরু করে।
এসব বিষয়ের ক্ষেত্রে জনস্বার্থ মামলার আবেদন গ্রহণের মাধ্যমে করতে শুরু করলে ভারতে বিচার বিভাগীয় সক্রিয়তার সৃষ্টি হয়।
এভাবে আটের দশকের পর থেকে সুপ্রিমকোর্ট সংবিধানের তৃতীয় অধ্যায়ে উল্লিখিত মৌলিক অধিকারের সঙ্গে সম্পর্কিত জীবনের অধিকার, স্বাধীনতার অধিকার ও সমতার অধিকারের পরিধিকে প্রসারিত করে জনস্বার্থে আরও সক্রিয় এবং ইতিবাচক ভূমিকা গ্রহণে প্রয়াসী হয়।
বস্তুত এই প্রবণতার জন্য যেসব বিষয় শাসন বিভাগ ও আইন বিভাগের এক্তিয়ারের মধ্যে পড়ে তা বিচার বিভাগীয় সক্রিয়তার মূল বিষয় হয়ে ওঠে।
এর ফলে সরকারি আবাসন বণ্টনে দুর্নীতি, পেট্রল পাম্প ও গ্যাসের ডিলারশিপের বণ্টনে বৈষম্য, নদীবাঁধের উর্ধ্বসীমা নির্ধারণ, শিশুশ্রম ও বেগারশ্রমের ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ দান, পরিবেশ দূষণজনিত কারণে কারখানা বন্ধের নির্দেশ প্রভৃতি সুপ্রিমকোর্টের বিচার বিভাগীয় সক্রিয়তার বিচার্য বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।
বিচার বিভাগীয় সক্রিয়তার সংজ্ঞা: বিচার বিভাগীয় সক্রিয়তার সংজ্ঞা কী হতে পারে সে সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে বিচারপতি সাওত তাঁর Judicial Activism : Trends and Prospects প্রবন্ধে এই অভিমত প্রকাশ করেন
যে, বিচার বিভাগীয় সক্রিয়তা বলতে সেই কাজকে বােঝায় যা আইন বিভাগ ও শাসন বিভাগের কর্মক্ষেত্রের ওপর বিচার বিভাগের প্রাধান্য বিস্তারকে সূচিত করে। এক্ষেত্রে বিচারপতিরা শুধু যে প্রশাসনকে নির্দেশ দেন তাই নয়, তাঁরা গৃহীত ব্যবস্থাদিরও তদারকি করে থাকেন।