ক্রীতদাস কাকে বলে ?: প্রাচীন কালে বিভিন্ন দেশের সমাজব্যবস্থায় কোনাে প্রভুর মালিকানাধীনে কোনাে কোনাে ব্যক্তির বসবাস করা ও বেঁচে থাকার প্রথা চালু ছিল।
ক্রীতদাস কাকে বলে ?
প্রভুর অধীনস্থ সেই সকল ব্যক্তি দাস বা ক্রীতদাস নামে পরিচিত ছিল। প্রভু তার অধীনস্থ ক্রীতদাসকে দিয়ে বিভিন্ন পরিশ্রমসাধ্য কাজ করিয়ে ক্রীতদাসের শ্রমের মূল্য নিজে উপভােগ করত।
এই প্রথা অনুযায়ী প্রভু ইচ্ছা করলে তার ব্যক্তিগত সম্পদ এইসব ক্রীতদাসদের বিক্রি বা হত্যাও করতে পারত। অধীনস্থ দাসের ওপর তার প্রভুর এই সার্বিক মালিকানার অধিকার বা প্রথা দাসপ্রথা বা ক্রীতদাস প্রথা নামে পরিচিত।
প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকেই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সমাজব্যবস্থায় ক্রীতদাসপ্রথার অস্তিত্ব ছিল বলে জানা যায়। পৃথিবীর প্রাচীনতম ফলক হিসেবে চিহ্নিত প্রাচীন সুমেরিয়ার একটি ফলকে (২১০০- ২০৫০ খ্রিস্টপূর্ব) ক্রীতদাস সম্পর্কিত আইনবিধির (Code of Ur-Nammu) উল্লেখ রয়েছে।
প্রাচীন ব্যাবিলনীয় সভ্যতায়ও ক্রীতদাসপ্রথার প্রচলন ছিল বলে হামুরাবির আইনবিধি থেকে আভাস পাওয়া যায়। এ ছাড়া প্রাচীন মেসােপটেমিয়া, পারস্য, মিশর, গ্রিস, রােম প্রভৃতি দেশেও ক্রীতদাসপ্রথার প্রচলন ছিল। তবে বিভিন্ন যুগে। ক্রীতদাসপ্রথার প্রচলন থাকলেও স্থান ও কালভেদে দাসদের অবস্থায় তারতম্য ছিল।
দাস অর্থনীতি: প্রাচীন রােমান, মিশরীয় ও ভারতীয় সভ্যতায় ক্রীতদাসপ্রথা একটি সুনির্দিষ্ট কাঠামাে লাভ করেছিল। এইসব সভ্যতার অর্থনীতিতে ক্রীতদাসপ্রথার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।
ক্রীতদাসদের শ্রমের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা এই অর্থনীতি দাস অর্থনীতি (Slave Economy) নামে পরিচিত। প্রসঙ্গত বলা দরকার যে, প্রাচীন কালে ক্রীতদাস ব্যবস্থা সবচেয়ে ব্যাপক আকার ধারণ করেছিল রােমান সভ্যতায়। সেখানকার সম্পূর্ণ অর্থনৈতিক ব্যবস্থাই ক্রীতদাসদের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিল।
মিশরের ক্রীতদাসপ্রথা রােমের মতাে এতটা তীব্র না হলেও সেখানকার সমাজ ও অর্থনীতিতে এই প্রথার যথেষ্ট প্রভাব পড়েছিল।
অন্যদিকে ভারতে যে দাসপ্রথার কথা বলা হয়। তা মােটেই রােমান দাসপ্রথার মতাে এতটা ব্যাপক ছিল না। অর্থাৎ ভারতের ক্রীতদাসপ্রথা রােমান ক্রীতদাসপ্রথার সমগােত্রীয় ছিল না।